আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাণিজ্য বন্ধের হুমকির বিনিময়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্ট্রের এই দাবি নস্যাৎ করল ভারত। বিদেশ মন্ত্রকের দাবি, ভারত-পাক সাম্প্রতিক সামরিক উত্তেজনার সময় দুই দেশের মধ্যে কোনও আলোচনায় "বাণিজ্যের বিষয়টি উঠে আসেনি।"

ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্য সম্পর্কে গণমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে, বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সাফ জানান, "৭ মে অপারেশন সিন্দুর শুরু হওয়ার পর থেকে ১০ মে গুলিবর্ষণ ও সামরিক পদক্ষেপ বন্ধের বিষয়ে সমঝোতা হওয়া পর্যন্ত, ক্রমবর্ধমান সামরিক পরিস্থিতি নিয়ে ভারত ও মার্কিন নেতাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। কোনও আলোচনায় বাণিজ্যের বিষয়টি উঠে আসেনি।"

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্ভাব্য পারমাণবিক যুদ্ধ এড়ানোর কৃতিত্ব গ্রহণের পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাণিজ্য বন্ধ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, "মার্কিন প্রশাসন দুই দেশের মধ্যে একটি সম্পূর্ণ এবং তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করেছে।"

ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, তিনি উভয় দেশের নেতাদের বলেছিলেন তাঁরা যুদ্ধবিরতিতে রাজি হলে আমেরিকা তাদের বাণিজ্যে সহায়তা করবে। যদি তারা রাজি না হয়, তাহলে আমেরিকা তাদের সঙ্গে বাণিজ্য করবে না। এরপর উভয় দেশ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাবি ঘিরে বিতর্ক দানা বাঁধে। এরপরই ওই ইস্যুতে মুখ খুল বিদেশ মন্ত্রক। যুদ্ধবিরতি এবং তাতে তৃতীয় দেশের ভূমিকা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে, বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বলেছেন, "দুই দেশের ডিজিএমও-দের মধ্যে ১০ মে বিকেল ৩.৩৫ মিনিটে ফোনে সমঝোতার নির্দিষ্ট তারিখ, সময় এবং শব্দবন্ধন ঠিক করা হয়েছিল। পররাষ্ট্র সচিব এই বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন।"

মন্ত্রক আরও জানিয়েছে যে, "এই কলের জন্য অনুরোধটি বিদেশ মন্ত্রক পাকিস্তানি হাই কমিশন থেকে দুপুর ১২.৩৭ মিনিটে পেয়েছিল। কারিগরি সমস্যার কারণে পাকিস্তানি পক্ষ প্রাথমিকভাবে হটলাইনে সংযোগ স্থাপনে সমস্যায় পড়েছিল। এরপর বিকাল ৩.২৫ মিনিটে ভারতীয় ডিজিএমও-এর উপলব্ধতার ভিত্তিতে সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল।"

যুদ্ধবিরতির নেপথ্যে সামরিক প্রেক্ষাপটের উপর জোর দিয়ে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বলেছে, "আপনারা অবশ্যই বুঝতে পারবেন যে, ১০ মে ভোরে আমরা পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ বিমান ঘাঁটিতে অত্যন্ত কার্যকর আক্রমণ চালিয়েছিলাম। এই কারণেই তারা গুলিবর্ষণ এবং সামরিক পদক্ষেপ বন্ধ করতে ইচ্ছুক ছিল। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই - ভারতীয় বাহিনীর শক্তিই পাকিস্তানকে তাদের গুলিবর্ষণ বন্ধ করতে বাধ্য করেছিল।"

আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততা সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে রণধীর জয়সওয়াল বলেন, "অন্যান্য দেশের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ ধারাবাহিক ছিল। অন্যান্য দেশের সঙ্গে কথোপকথনের ক্ষেত্রে, ভারতের বার্তা স্পষ্ট এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল এবং আমরা পাবলিক প্ল্যাটফর্ম থেকে যে বার্তাটি দিচ্ছিলাম তা ব্যক্তিগত কথোপকথনেও দেওয়া হয়েছিল।"

বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র আরও বলেন যে, "এটা ছিল যে ভারত ২২ এপ্রিলের সন্ত্রাসবাদী হামলার জবাবে জঙ্গিদের ডেরা লক্ষ্য করে হামলা জানাচ্ছিল। তবে, যদি পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী গুলিবর্ষণ করে, তাহলে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীও পাল্টা গুলিবর্ষণ করবে। যদি পাকিস্তান থামে, তাহলে ভারতও থামবে।" মন্ত্রকের তরফে দাবি করা হয়েছে যে, "অপারেশন সিঁদুর শুরুর সময় পাকিস্তানি পক্ষকে এই বার্তাটিও জানানো হয়েছিল, যা ইসলামাবাদ গুরুত্ব দেয়নি।"

শুধু তাই নয়, এদিন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র নির্দেশ দেন পাক অধিকৃত কাশ্মীর খালি করুন। কাশ্মীর নিয়ে কোনও তৃতীয় পক্ষের ভূমিকা থাকবে না। ভারত-পাক সাম্প্রতিক উত্তেজনার আবহে এবার কাশ্মীর প্রসঙ্গে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিল ভারত।